স্বাধীনতার/ বিজয়ের ৫০ বছরে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের অবদান

Post a Comment
স্বাধীনতার/ বিজয়ের ৫০ বছরে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের অবদান:
ঘুরে দাঁড়াবার শক্তি জুগিয়েছে ব্যাংক খাত ১২টি ব্যাংক একীভূত করে ছয়টি সরকারি ব্যাংকে রূপান্তর করে যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের। দেশে এখন ব্যাংকের সংখ্যা ৬০টি। ১৯৭২-৭৩ সালে তফসিলি ব্যাংকগুলোর শাখার সংখ্যা ছিল মাত্র ১ হাজার ২৯৫টি। বর্তমানে সেটা বেড়ে হয়েছে ১০ হাজার ৮১২টি। ৭০২ কোটি টাকা থেকে আমানত বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৭৫ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকায়। হতদরিদ্র, পথশিশু কিংবা কৃষকের কাছে 'ব্যাংক' একসময় ছিল দূরবর্তী একটি নাম। ব্যাংক বলতে লোকজন বড়লোকদের অর্থ রাখার জায়গা মনে করত, তবে এখন ব্যাংকের সঙ্গে সম্পৃক্ত দেশের সিংহভাগ মানুষ। স্বাধীনতার পর ৫০ বছরে এটি বিরাট এক অর্জন। যেভাবে শুরুঃ

স্বাধীনতাপূর্ব ১২টি ব্যাংক এক করে ছয়টি সরকারি ব্যাংকে রূপান্তরের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে শুরু হয় ব্যাংক খাতের যাত্রা। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় ব্যাংক খাতই এখন দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। ব্যাংকের অর্থায়নে গড়ে উঠেছে বিশাল উদ্যোক্তা শ্রেণি, যাদের হাত ধরে বিস্তৃত হয়েছে বেসরকারি খাত। পাকিস্তানের দায় নিয়ে যাত্রা শুরু করা শূন্য রিজার্ভের বাংলাদেশ ব্যাংকে এখন রিজার্ভের পরিমাণ ৪৪+ বিলিয়ন ডলারের বেশি। আমানতের পরিমাণ প্রায় ১৩ লাখ কোটি টাকা। আর শূন্য থেকে শুরু করা বেসরকারি খাতের ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২ লাখ কোটি টাকায়। এর ফলে বিপুলসংখ্যক উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে বেসরকারি খাতে। রপ্তান আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ বিলিয়ন ডলারের বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক 

♦ গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, 'আজকের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বঙ্গবন্ধুর চিন্তার ফসল। যুদ্ধবিধস্ত দেশে উদ্যোক্তা তৈরি এবং গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নে ব্যাংকের গুরুত্ব অনুধাবন করে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

> যেভাবে একীভূত হয় ব্যাংক স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধস্ত দেশ পুনর্গঠনে হাত দেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭২ সালে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে জাতীয়করণ করা হয় ব্যাংকিং খাত। স্টেট ব্যাংক অব পূর্ব পাকিস্তানের শাখা নিয়ে গঠন করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংক

→ ১২টি ব্যাংক একীভূত করে সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, পূবালী ও উত্তরা ব্যাংকে সরকারি ব্যাংকে রূপান্তর করা হয়। এভাবে যাত্রা শুরু হয় বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের। এ ছয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বাইরে এ সময় বিদেশি ব্যাংকগুলোকে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখার অনুমতি দেয়া হয়।

> এ ছাড়া শিল্প ও কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনের জন্য দুটি যুক্ত হয় ব্যক্তি মালিকানায় বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক।

স্বাধীনতার ৫০ বছরে অর্জনঃ

বিশেষায়িত ব্যাংকের কার্যক্রমও শুরু করা হয়। ১৯৮২ সালের পর

অর্থনৈতিক মুক্তিই ছিল বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জন্মের অন্যতম লক্ষ্য। তাই পরাধীনতার কৃঙ্খল ভেঙ্গে ১৯৭১ সালে জন্ম নেয়া বাংলাদেশ প্রথমেই গুরুত্ব দেয় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় অন্যতম নিয়ন্ত্রক ব্যাংক খাত। ১৯৭০-এর দশকে ঋণ ব্যবস্থার প্রাথমিক কাজ ছিল মূলত বাণিজ্য এবং সরকারি খাতে অর্থায়ন করা, যা ছিল মোট ঋণের প্রায় ৭৫ ভাগ। ধীরে ধীরে ব্যাংক খাতের বিস্তৃতি বেড়েছে। আজকের যে অর্থনৈতিক উত্তরণ, তার পেছনে রয়েছে ব্যাংক খাতের অসামান্য অবদান। ১৯৭২ সালে ১ টাকার নোট প্রচলনের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম নিজস্ব কাগজের মুদ্রা চালু হয়। স্বাধীনতার মাত্র তিন মাসের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে ভারত থেকে ছাপানো হয় ১ ও ১০০ টাকা মূল্যমানের নোট। পরে ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ এসব নোটকে নিজস্ব মুদ্রা হিসেবে অবমুক্ত করা হয়। খেলাপি ঋণ, অর্থ লোপাসহ নানা সমালোচনা থাকলেও স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বড় অবদান এই ব্যাংকিং খাতের।

বর্তমান ঋণ-আমানত।

ব্যাংক পুনর্গঠনের পরই ঋণ কার্যক্রম জোরদার করে বঙ্গবন্ধু সরকার। ১৯৭২-৭৩ সালে তফসিলি ব্যাংকগুলোর মোট শাখা সংখ্যা ছিল মাত্র ১ হাজার ২৯৫টি। বর্তমানে সেটা বেড়ে ১০ হাজার ৮১২টিতে দাঁড়িয়েছে। ওই সময়ে মোট আমানত ছিল ৭০২ কোটি টাকার। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে ব্যাংক খাতে আমানত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৭৫ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকায়। ঋণের প্রবৃদ্ধিও চোখে পড়ার মতো। ১৯৭২-৭৩ সালে মোট ঋণ ছিল মাত্র ৫৫৪ কোটি টাকা, যা বর্তমানে ১২ লাখ ১৯ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।

আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে নতুন নতুন সেবা
===========================
এক দশক আগেও মোট জনগোষ্ঠীর ৮৫ শতাংশ ছিল ব্যাংকিং সেবার বাইরে। ঋণের জন্য বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) বা গ্রাম্য মহাজনই ছিল ভরসা। বর্তমানে প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশের আর্থিক খাতে যুক্ত হচ্ছে নিত্যনতুন ব্যাংকিং সেবা। দেশের অতিদরিদ্র, পথশিশুর হিসাব, স্কুল ব্যাংকিংসহ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর মানুষ ব্যাংকে হিসাব খোলার মাধ্যমে সেবার আওতায় এসেছে। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস বা এমএফএস ব্যাংকবহির্ভূত জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে গুরুত্বপূর্ণ। ভূমিকা রেখেছে। ২০১১ সালে চালু হওয়া এ সেবা গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে ১৬টি ব্যাংক। এরপর যুক্ত হয়েছে এজেন্ট ব্যাংকিং। গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে ব্যাংকের শাখা খোলা সম্ভব নয়, সেখানে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের শাখা খুলে কাজ চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে এ সেবা চালু হয়েছে ২০১৩ সালে। দেশের ২৮টি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালুর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে বুথ ব্যাংকিং, উপশাখার মতো নিত্যনতুন ব্যাংকিং ধারণা।

কমছে কাগজে টাকার ব্যবহার

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের ৪ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম ১ টাকার কাগুজে মুদ্রার প্রচলন হয়। বর্তমানে রয়েছে ১ টাকা, ২ টাকা ও ৫ টাকা সরকারি এতে অর্থসচিবের সই থাকে। বাকিগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের নোট বা মুদ্রা। প্রচলিত ১০, ২০, ৫০, ১০০, ২০০ ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোটে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সই থাকে।

তবে ক্রমান্বয়ে কমছে কাগুজে টাকার ব্যবহার। মানিব্যাগ অথবা পকেট ফুলিয়ে টাকা রাখার যে প্রবণতা একসময় ছিল, এখন সেই ধারণা থেকে বের হয়ে আসছে সবাই। বিকল্প হয়ে উঠছে কার্ড, ইন্টারনেট, মোবাইল ব্যাংকিং। বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, বর্তমানে। ব্যাংকগুলোর ইস্যু করা মোট ডেবি, ক্রেডিট ও প্রি-পেইড কার্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৭০ লাখ ৫৪ হাজার ৮৬৭টি।

♥ ঋণগ্রহীতা থেকে ঋণদাতার কাতারে:

স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশের উন্নয়নে বা নানা প্রয়োজন মেটাতে ঋণ করা বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ঋণ দিয়েছে কোনো দেশকে। আগস্ট মাসে শ্রীলঙ্কাকে ৫ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার মাধ্যমে ঋণদাতা দেশের তালিকায় নাম লেখায় বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভায় তাদের ঋণ দেয়ার নীতিগত অনুমোদন হয়।

যেসব দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ কম, তারা বিপদে পড়লে কারেন্সি সােয়াপের মাধ্যমে অন্য দেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসে। বাংলাদেশে এখন রিজার্ভের পরিমাণ ৪৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি। শ্রীলঙ্কাকে দেয়া হবে ২৫ কোটি ডলার। ৫ কিস্তিতে এই অর্থ ছাড় করা হবে।

অন্য দেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে আসে। বাংলাদেশে এখন রিজার্ভের পরিমাণ ৪৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি। শ্রীলঙ্কাকে

দেয়া হবে ২৫ কোটি ডলার। ৫ কিস্তিতে এই অর্থ ছাড় করা হবে।

বিশ্লেষকরা যা বলছেন: বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, দেশের ব্যাংক খাতে প্রযুক্তির আধুনিকায়ন করা হয়েছে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রমের আওতায় মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং চালুর ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্যাংকিং সেবা। পৌঁছে গেছে। ভবিষ্যতে

ব্যাংক ব্যবস্থাকে আরও বেশি আধুনিক প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করতে হবে।'

> ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'বিজয়ের ৫০ বছরে দেশে অনেক ব্যাংক হলেও মর্যাদাশীল ব্যাংক এখনও হয়নি। ব্যাংক খাতে সুশাসনের বিশাল সমস্যা বিদ্যমান। প্রযুক্তিগতভাবেও আমরা খুব বেশি এগাতে পারিনি। কারণ এ খাতে খরচ অনেক বেশি। তিনি আরও বলেন, '৫০ শতাংশ মানুষ এখনও ব্যাংক সেবার বাইরে। আগামীতে প্রত্যেক পরিবার যেন। ব্যাংকিং খাতের আওতায় আসে, সেদিকে জোর দিতে হবে।'

> সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউর রহমান প্রধান বলেন, 'আমরা এখন অনেক ক্যাশলেস ব্যাংকিং করি। সামনের ব্যাংক খাত পুরো ডিজিটালাইজড হবে, কিন্তু প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে আমাদের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।

Sourse: 
#FOCUS_WRITING SUPPLEMENT PLUS

Related Posts

Post a Comment

[Place For Ads]