কুলাউড়ার কানিহাটি গ্রামের সন্তান আবেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে কৃষি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা শেষে চাকরি নিয়ে চলে যান অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানকার জাতীয় গবেষণা সংস্থার প্রধান ধানবিজ্ঞানী হিসেবে ধানের জিন নিয়ে গবেষণা করে কাটিয়ে দিয়েছেন ২০ বছর। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৩০০ রকমের নতুন ধান উদ্ভাবন করেছেন। পেশাগত কারণে বিদেশের মাটিতে গবেষণা করলেও দেশে তার গ্রাম কানিহাটিতে গড়ে তুলেছেন খামার।
আবেদ চৌধুরী বলেন, 'আম-কাঁঠালের মতো বছরের পর বছর টিকে থাকার সৌভাগ্য ধান গাছের হয় না- এটা কোনোভাবেই মানতে পারছিলাম না। তাই নেমে পড়ি গবেষণায়।'
ধান গাছের দ্বিতীয় জন্ম নিয়ে ১৪ বছর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান আবেদ চৌধুরী। ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে কানিহাটি গ্রামে ২৫ বর্গমিটারের একটি ক্ষেতে ২০টি ধানের জাত নিয়ে গবেষণা শুরু করেন তিনি। এর মধ্যে চীন, ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশের ও স্থানীয় ধানের জাত ছিল। যে জাতগুলোর ধান পাকার পর কেটে নিয়ে গেলে আবার ধানের শীষ বের হয়, সেগুলো তিনি আলাদা করেন। এভাবে ১২টি জাত বের করেন। তিন বছর ধরে জাতগুলো চাষ করে দেখলেন, নিয়মিতভাবে এগুলো দ্বিতীয়বার ফলন দিচ্ছে। তারপর তিনি শুরু করেন একই গাছে তৃতীয়বার ফলনের গবেষণা। তাতেও সফল হলেন। কিন্তু এর মধ্যে চারটি জাত ছাড়া বাকিগুলো চতুর্থবার ফলন দিয়ে ধ্বংস হয়ে যায়।
আবেদ চৌধুরী জানান, চারটি জাত একই গাছ থেকে পাঁচবার ফলন দিচ্ছে। এই চারটি জাতের ওপর ১০ বছর ধরে চলছে গবেষণা। চলতি বছরের জানুয়ারিতে বোরো ধানের এই চারটি জাত দুই বিঘা জমিতে রোপণ করা হয়। পরিমাণমতো ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা হয়। সঠিকভাবে সেচ ও পরিচর্যা করার পর ১১০ দিনের মধ্যে ৮৫ সেন্টিমিটার থেকে এক মিটার উচ্চতার গাছে ফসল আসে। পরে মাটি থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার উচ্চতায় পরিকল্পিতভাবে ওই ধান কেটে ফেলা হয়।
মে মাসে প্রথম দিকে প্রথমবার কাটা ধানে হেক্টরপ্রতি উৎপাদন হয়েছে চার টন। তারপর থেকে ৪৫ দিন অন্তর প্রতিটি মৌসুমে হেক্টরপ্রতি কখনও দুই টন, কখনও তিন টন ফলন এসেছে। সবগুলো জাত হেক্টরপ্রতি প্রায় ১৬ টন ফলন দিয়েছে।
বিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী বলেন, দুটি পদ্ধতির মাধ্যমে জাতগুলো করা হয়েছে। স্থানীয় জাতের সঙ্গে বিভিন্ন উচ্চ ফলনশীল জাত এবং স্থানীয় জাতের সঙ্গে স্থানীয় হাইব্রিড জাতের সংকরায়ন ঘটানো হয়েছে। ১০-১২ বছর আগে এগুলো থেকে দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয়বার ফলন দেওয়ার জন্য উপযোগী করে চিহ্নিত করা হয়।
কুলাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল মোমিন বলেন, এক গাছে পাঁচবার ধান উৎপাদন নতুন দেখেছি। এটি দেশের জন্য সুখবর। এই উদ্ভাবনের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়া উচিত।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) নবনিযুক্ত মহাপরিচালক, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানী ও বিশিষ্ট কৃষিবিদ ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, পুনর্জন্ম পদ্ধতিতে একটি ধান গাছে চারবার ফলন আসা সম্ভব। তবে পাঁচবার ফলন বের করা একটু কঠিন।
ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলামের ভাষ্য, প্রথমবার ফলন আসার পর পরের বার ফলন কমতে থাকে। এ জন্য এটি এতটা লাভজনক নয়। ততদিনে এই ধান কেটে আরেকটি ফসল লাগালে লাভজনক হবে। এক গাছে সর্বোচ্চ দু'বার ফলন হলে ভালো। এ পদ্ধতিতে এখন ফল বাড়াতে আরও গবেষণা করা যেতে পারে।
Post a Comment
Post a Comment